হাকিকুল ইসলাম খোকন,সিনিয়র প্রতিনিধিঃইতালিতে প্রধান মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভাপকি শেখ হাসিনার আগমনের দিন অন্যান্য রাজনৌতিক ও মানবাধিকার সংস্থার সাথে বিক্ষোভ করেছে জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম ( জে এস এফ ) এর নেতা কর্মীরা। খবর বাপসনিঊজ ।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্যে জে এস এফ নেতারা বলেন -
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনগুলো ছাড়া প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই নজির রয়েছে অনিয়মের। ফলে রাষ্ট্রের চেয়ে দল, দলের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে ব্যক্তি বিশেষ। প্রতিহিংসা, ব্যক্তি পূজা ও ভক্তি মার্গের রাজনীতির ব্যাপকতা এখন দুর্দমনীয়। বাক, ব্যক্তি, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা চরমভাবে সংকুচিত। সীমাহীন দুর্নীতি ও অযোগ্য নেতৃত্বের হাতে বন্দি দেশবাসী। নির্বাচনের সময়টায় বরাবরই অনিবার্য হয়ে উঠে রাজনৈতিক সংঘাত।
দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক এই সময়েও শেখ হাসিনা বিশাল বহর নিয়ে বিদেশ বিলাসী ভ্রমণ করে জাতির সাথে তামাশা করছেন।
শেখ হাসিনার নিজের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে জে এস এফ নেতারা বলেন - শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন- ‘আমি পার্শ্ববর্তী দেশকে অনেক কিছুই দিয়েছি যা তারা সারাজীবন মনে রাখবে।’ তিনি দেশকে উজাড় করে দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বকে হুমকির মধ্যে ফেলেছেন। দেশ বিক্রি করে দিয়েছেন।
জে এস এফ নেতারা আরো বলেন - আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের অতি নগণ্য সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ ও দলবাজ কর্মকর্তা অপপ্রচার চালাচ্ছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী শাসনামলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতি ও জেল-জরিমানার মতো পরিস্থিতির শিকার হতে হবে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। এতে বোঝা যায়, অনির্বাচিত ও অবৈধ আওয়ামী সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যেসব ষড়যন্ত্র করছে, এমন অপপ্রচার সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
ভোট ডাকাত সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ইতিমধ্যে রুখে দাঁড়িয়েছে। তাই তারা জনগণের ভোট ডাকাতি করার জন্য আবারও মাস্টারপ্ল্যান করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গভীর রাতে, সন্ধ্যা রাতে বা দিনের বেলায় ভোট ডাকাতি করতেই সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন।
কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া এ দেশের জনগণ আর কোনো নির্বাচন মানবে না। বর্তমান আওয়ামী সরকার বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেশকে একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই এই স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটবে ইনশাআল্লাহ। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’লগিবৈঠা নিয়ে সহ শিক্ষাঙ্গনে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে জে এস এফ নেতারা বলেন - ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগিবৈঠার দিনেদুপুরের নারকীয় হত্যার দিনে। শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে সেদিন লগিবৈঠা নিয়ে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার সন্ত্রাসী বাহিনী রাজধানীর বুকে ঝাপিয়ে পড়েছিল। তারা কেবল নির্মমভাবে পিটিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যাই করেনি, লাশের বুকের উপর চড়ে শ্মশানের পিশাচের মত নাচানাচি করেছে।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবরারকে সারা রাত ধরে পিটিয়ে হত্যা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ইডেন কলেজে ছাত্রীদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ধরে ধরে সারারাত নির্যাতন, এ সবই আওয়ামী স্যাডিস্টদের বিকৃত চরিত্রের বহি:প্রকাশ।
আওয়ামী লীগ বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। বিদ্যুতের নামে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। আর আওয়ামীলীগ বিদ্যুতের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে।তারা ব্যাংক লুট করেছে, প্রশাসনকে রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণ করেছে। কারাবন্দি সব ওলামায়ে কেরামের মুক্তি, দেশব্যাপী সরকার বিরোধী মতের সকল নেতা কর্মীদের , আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আলেমদের মুক্তি দিতে হবে। আমরা চাই অখণ্ড সংবিধান। যে সংবিধান থেকে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে, ওই সংবিধান আমরা চাই না। বাংলাদেশের জনগণ যে সংবিধান তৈরি করেছিল, সেই সংবিধানের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব। আপনাদের তৈরি, খায়য়ল হকের তৈরি করা ওই সংবিধানের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না।
জে এস এফ নেতারা আরো বলেন -
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সর্বদাই আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিলেও স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতীয় নিয়ন্ত্রণপুষ্ট দেশটির মিডিয়া এই সত্য আড়ালের সর্বাত্বক চেষ্টা করে গেছে। সত্তরের দশকে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের গ্রামবাংলায় সশস্ত্র ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসের হাত থেকে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তো বটেই, এমন কি সাধারণ, অরাজনৈতিক পরিবারের নারীরাও নিরাপদ ছিলেন না। আজকের মতই তখনও আওয়ামী প্রশাসন সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের সকল ধরনের নিরাপত্তা দিত। জনগণের নিরাপত্তা প্রদানের পরিবর্তে তৎকালিন একনায়ক, বর্তমান ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিব উল্টো জনগণের উপর “লাল ঘোড়া” চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। আজকে আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এক দফা শুধু বিএনপি বা দলের ব্যক্তির ডাক নয়। এটা সমগ্র জাতির ঘোষণা। ভিসা নীতি বা কী আসছে এগুলো দেখার বিষয় নয়। এটা যাদের দেখার বিষয় তারাই দেখবে। আমরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সমাধান করব। আমাদের লক্ষ্য টেক ব্যাক বাংলাদেশ।
প্রশাসনে নগ্ন দলীয়করণ, দলীয় বিবেচনায় চাকরি ও পদোন্নতি, ভিন্নমতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, লেখক, সাংস্কৃতিককর্মী ও কৃষিবিদসহ পেশাজীবীদের চাকুরিচ্যুত ও নিষ্পেষণ, জেল-জুলুম, হত্যা-গুম বন্ধ, সীমাহীন দুর্নীতিতে জর্জরিত, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি